ওয়ার্ডপ্রেস কি?
প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ার্ডপ্রেস ছিল একটা ব্লগিং প্লাটফর্ম। মানে আপনের একটা ব্লগ অ্যাড্রেস থাকবে, সেইটাতে আপনি ব্লগিং করবেন। ধরেন আপনে একটা ব্লগ খুললেন প্রথম আলো ব্লগে, আপনের খুব ইচ্ছা এইখানে ব্লগ লেইখা ফাটায় ফেলবেন। তো আপনে একটা ব্লগ লেখলেন, লেখলেন “আমার নাম মুকলেস, আমার বাম হাত এইটা, আমার পাঁচটা আঙ্গুল আছে, আমার দুইটা হাত, দুইটা পা……”; তো এই ব্লগ লেখার পরে আপনে পোস্ট কইরা দিলেন; দ্যাখা গেল ব্লগের মডারেটর সাহেব আপনের সব লেখা কাইট্টা ছাইটা লেইখা রাখছে “আমি মুকলেস”; এই দেইখা আপনি হতাশায় ডিসিশন নিলেন যে এই ব্লগের সাথে আপনে আর নাই, আপনি নিজের ব্লগ খুলবেন, নিজের যা মন চায় তাই লিখবেন। প্রথম দিকে ওয়ার্ডপ্রেস আপনাকে এই ব্লগ খোলার ই সুযোগ কইরা দিত।
দিন পাল্টাইছে, পাল্টাইছে ওয়ার্ডপ্রেস; পালটাইতে পালটাইতে ওয়ার্ডপ্রেস এখন মহিরুহ। টাইমস এর হিসাব মতে এখন সারা দুনিয়ায় প্রায় ৫৩ ভাগ ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো। কারন এইটা দিয়ে সাইট বানাইতে কোন কোডিং জানা লাগে না, মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে যেভাবে লেখা যায়, ওয়ার্ডপ্রেসেও একইভাবে লেখা যায়, এর উপর আছে হাজার ধরনের প্লাগিন্স; যেইটা দিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইট সাজাইতে পারবেন মনের মত। আর ওয়ার্ডপ্রেস এর সবচেয়ে অসাধারণ দিক হইল এইটা পুরা ফ্রী। এক টাকাও কেউ চাইব না আপনের কাছে কোন দিন।
ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রকারভেদ –
ওয়ার্ডপ্রেস মূলত দুই ধরনের সার্ভিস প্রোভাইড করে, দুইটাই ফ্রী –
১. wordpress.com
wordpress.com এ আপনি একটা ফ্রী সাবডোমেইন পাবেন, প্রায় ২ জিবির মত হোস্টিং পাবেন, আর পাবেন ওয়ার্ডপ্রেস এর নির্দিষ্ট করে দেয়া কয়েকটা ডিজাইন, যেগুলার কেতাবি নাম ‘ওয়ার্ডপ্রেস থিম’; আপনি যেভাবে নরমাল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলছেন ঠিক সেইভাবে নরমালি আপনি wordpress.com এ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আর ধুমায় ব্লগিং করতে পারেন। তবে এর সমস্যাও আছে, wordpress.com এ খোলা সাইট বা ব্লগে আপনি কোন ধরনের চেঞ্জ করতে পারবেন না, প্লাস আপনাকে যেই ওয়েবসাইট ঠিকানা দেওয়া হবে সেইটা হবে এইরকম – mukhles.wordpress.com
২. wordpress.org
এখন ধরা যাক আপনের উপরের অ্যাড্রেস টা (mukhles.wordpress.com) পছন্দ হয় নাইক্কা। আপনি বানাইতে চান www.mukhles.com সেই ক্ষেত্রে আপনার ইউজ করতে হবে wordpress.org; এইটা করার জন্য রেজিস্ট্রেশন এর কোন বালা মুসিবত নাই; জাস্ট একটা ডোমেইন আর একটা হোস্টিং লাগবে। আমাদের এই কোর্সে wordpress.org দিয়ে কিভাবে ওয়েবসাইট বানানো যায় সেইটাই শিখব। আমরা এই পুরা টিউটোরিয়ালে একটা পেইড ডোমেইন এবং হোস্টিং ইউজ করব। আপনারা চাইলে বা আপনাদের থাকলে আপনারাও পেইড ডোমেইন হোস্টিং প্র্যাকটিসের জন্য ইউজ করতে পারেন, বা অনেক ফ্রী হোস্টিং এবং ডোমেইন কোম্পানি আছে যারা ফ্রী তে আপনাদের ডোমেইন হোস্টিং দিবে, সেইটাও ইউজ করতে পারেন। আমি নিচে কিছু লিস্ট দিয়ে দিলাম, এছাড়াও অনেকে আছে কিন্তু ফ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে এরাই বেস্ট। অবশ্য আপনি যদি কোন প্র্যাক্টিস না কইরা শুধুই শিখতে চান সেই ক্ষেত্রেও প্রবলেম নাই, জাস্ট টিউটোরিয়াল আর ভিডিও ক্লিপস গুলা খুব মন দিয়া খেয়াল কইরেন।
ফ্রী ডোমেইন – .tk ডোমেইন
ফ্রী হোস্টিং – FreeHostia, 000webhost
ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপের পদ্ধতি –
ওয়ার্ডপ্রেস দুইভাবে সেটআপ দেওয়া যায়,
১. ম্যানুয়াল
২. অটোমেটিক
দুইভাবেই আপনি একই রকম রেজাল্ট পাবেন, তবে পার্থক্য হইল আপনি যদি ম্যানুয়ালি সেটআপ দিতে চান তবে আপনার সেটআপ দিতে মিনিমাম ত্রিশ মিনিট লাগবেই, আর যদি অটোমেটিক ইন্সটল দিতে চান তাহলে লাগবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তো আজকে আমরা শিখব কিভাবে অটোমেটিকলি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করবেন।
আমরা এই টিউটোরিয়ালে ব্যাবহার করেছি একটি প্র্যাকটিস ডোমেইন (practice.shadnanmahmud.com). আমাদের ইচ্ছা যে এই ডোমেইন এই আমরা ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দিব। এখন অটোমেটিক সেটআপ দেওয়ার জন্য আপনাকে চলে যেতে হবে এই ডোমেইন (আসলে সাবডোমেইন) এর কন্ট্রোল প্যানেলে। যারা সাধারনত হোস্টিং প্রোভাইড করে তারা এখন এর সাথে ওয়েবসাইট বানানোর জন্য বিভিন্ন APPS INSTALLER ও জুড়ে দ্যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইউজ করা INSTALLER হচ্ছে SOFTACULOUS. আপনার যদি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি চেক করে দেখেন, আপনার কন্ট্রোল প্যানেল এও আপনি এই ধরনের INSTALLER পাবেন। INSTALLER এর অনেক অপশন গুলার মধ্যে থেকে WordPress এ ক্লিক করেন।

ক্লিক করা মাত্রই আপনি ওই ইন্সটলার এর হোমপেজে চলে যাবেন। সেখানে আপনাকে ইন্সটল এর অপশন দেখাবে –

ইন্সটল এ ক্লিক করার পর আপনার কাছে খালি ঘর পুরনের জন্য একটা নতুন পেজ আসবে। সেই পেজে অপশন গুলো পাবেন সাধারণত এমন –

প্রত্যেকটা ঘর পূরণ করা লাগবে না, তবে যেগুলো ইম্পরট্যান্ট সেগুলা হল ডাটাবেস এর ঘর, ব্লগের নাম, ব্লগের ডেসক্রিপশন, আপনার ইউজার নেম আর সবশেষে পাসওয়ার্ড। ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা আপনি যতবার আপনার ওয়েবসাইটে কোন কিছু এডিট করতে চাইবেন তত বার আপনাকে এই পাসওয়ার্ড আর ইউজার নেম ইউজ করতেই হবে। এগুলো ছাড়াও দুইটা অপশন সাধারনত আসে – একটা টেবিল প্রিফিক্স আর আরেকটা মাল্টিসাইট, এই দুইটা ঘরে হাত দেয়ার কোন দরকার নাই। থাক এই দুইটা ঘর নিজের মত।
তো এরপর যেখানে মেইল অ্যাড্রেস চায় সেখানে নিজের মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দেন। এরপর ইন্সটল নামের যে বাটনটা আছে তাতে দেন গুতা। ব্যাস কাহিনী খতম।

এখন আপনার যেই ওয়েবসাইট সেইটা রিলোড দিলেই দেখবেন খুবই চমৎকার ভাবে সেখানে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল হয়ে গেছে। ওয়ার্ডপ্রেস-এ কোন এডিট বা অন্য কিছু করার জন্য আপনাকে এখন যেতে হবে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ডে। ড্যাশবোর্ড-এ লগ ইন করতে আপনার ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস এর পর লিখুন /wp-admin. মানে আপনার ওয়েবসাইট যদি হয় ‘www.mukhles.com’ তাহলে আপনার লিখতে হবে ‘www.mukhles.com/wp-admin’
অথবা, আপনার ওয়েবসাইটের নাম যদি হয় ‘practice.shadnanmahmud.com’ তাহলে আপনার লিখতে হবে ‘practice.shadnanmahmud.com/wp-admin’; এই অ্যাড্রেস এ গেলে আপনি নিচের মত একটা পেজ পাবেন।

সেখানে ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করলেই পেয়ে যাবেন আপনার ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ড। এই ড্যাশবোর্ড থেকেই আপনি আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানুয়াল সেটআপ
গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস অটোম্যাটিক ইন্সটল করতে হয়। আজকে শিখব কিভাবে ম্যানুয়ালি ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করা যায়।
ম্যানুয়ালি ইন্সটল এর জন্য যা যা লাগবে –
১. ফাইল ট্রান্সফার সফটওয়্যার (FTP CLIENT)
২. ওয়ার্ডপ্রেস ফাইল
৩. একটা MYSQL ডাটাবেস
ফাইল ট্রান্সফার সফটওয়্যার –
এইটা সাধারণত FTP CLIENT নামেই বেশী পরিচিত। এর কাজ হইল এক জায়গা থেকে ফাইল আরেক জায়গায় ট্রান্সফার করা। বিভিন্ন ধরনের ফাইল ট্রান্সফার সফটওয়্যার পাওয়া যায় অনলাইনে, তবে সবচেয়ে ভালো কাজ করে FILEZILLA. এইটা ছাড়াও আপনি WINSCP ও ইউজ করতে পারেন। এই পর্বে আমরা ট্রান্সফার প্রটোকল হিসেবে FILEZILLA ব্যাবহার করেছি।
ওয়ার্ডপ্রেস ফাইল –
এইটাই মূল ফাইল, আপনি এই ফাইলটাই মূলত ট্রান্সফার করবেন। ফাইল নামাতে হবে wordpress.org এই ঠিকানা থেকে। আপনি দুইভাবে নামাতে পারেন, একটা .zip হিসেবে অথবা tar.gz হিসেবে। আপনি অবশ্যই .zip হিসেবে নামাবেন। নামানোর পদ্ধতি খুব সোজা, যেভাবে ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করেন সেভাবে DOWNLOAD বাটনে চাপ দিলেই আপনার কম্পিউটারে ফাইল ডাউনলোড হওয়া শুরু হবে।
MYSQL ডাটাবেস –
ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার জন্য একটা ডাটাবেস তৈরি করা লাগবে, কঠিন কিছুই না। আপনার ওয়েবসাইটের কন্ট্রোল প্যানেলে যান, সেখানে MYSQL ডাটাবেস তৈরির অপশন পাবেন। ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে তৈরি করে ফেলুন ডাটাবেস।
এখন আপনার কাছে ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে, তো চলেন শুরু করা যাক। প্রথমে, ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভার খুলুন। এখন ওয়ার্ডপ্রেস এর সমস্ত ফাইলগুলো আপনার ওয়েব সার্ভারের public_html এই ফোল্ডারে কপি করে নিন। যদি আপনি ২৫৬ কেবিপিএস এর নেট ইউজ করেন তাহলে সব ফাইল কপি হতে সময় লাগবে ২৫ মিনিট।
সমস্ত ফাইল কপি হয়ে গেলে এইবার আপনার ওয়েবসাইট খুলুন। দেখবেন সেখানে আপনার ডাটাবেস এর ইনফরমেশন পূরণ করার জন্য একটি খালি পেজ পাবেন। এই পেজে ডাটাবেস এর সমস্ত ইনফরমেশন দিয়ে SUBMIT বাটনে ক্লিক করুন। এইবার আবার ওয়েবসাইট রিলোড দিলে দেখবেন আপনার ওয়েবসাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল হয়ে গেছে।
ওয়ার্ডপ্রেস থীম –
ওয়ার্ডপ্রেস ক্যান এত বিখ্যাত বলতে পারেন? শুধুমাত্র এর মেইন্টেইনেন্স সুবিধার জন্যই না, এর সবচেয়ে বড় কারন আপনি যখন ইচ্ছা তখন আপনার সমস্ত লেখা ঠিকঠাক রেখেই যেমন ইচ্ছা তেমন একটা ডিজাইন আপনি ওয়েবসাইটে লাগাইতে পারেন। কোডিং করে ওয়েবসাইট বানাইলে কি কি প্রবলেম হইতে পারে? ধরেন আপনি ১৫ দিন খেটে ম্যানুয়ালি কোড ইনপুট করে একটা ওয়েবসাইট বানাইলেন, সেইটার মধ্যে বিভিন্ন কনটেন্ট যোগ করলেন। এরপর দ্যাখা গেল ২ মাস পর আপনের অন্য একটা ডিজাইন পছন্দ, তখন তো আপনের পুরা কাজ আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। এইটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।
এখন আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করেন, তাইলে এই বিরক্তি থেকে পুরা মুক্তি। আজকে একটা ডিজাইন পছন্দ, কালকে ওইটা ভাল লাগতেছে না; তো কি করবেন? থিম অপশনে যাবেন, নতুন থিম এর জন্য সার্চ দিবেন, যেইটা ভাল লাগবে সেইটাতে ইন্সটল বাটনে টিপ দিলেই আপনার পুরা ওয়েবসাইট এর ডিজাইন চেঞ্জ হয়ে যাবে, সাথে সাথে আপনার যে আগের লেখা, ছবি যা যা আছে তার সবই ঠিক জায়গাতেই থাকবে, কোন অদল বদল নাই।
আবার আপনার যদি ২ মাস পর মনে হয় “নাহ আগের ডিজাইনটাই তো ভালো ছিল”, তাইলেও কোন প্রবলেম নাই আপনি আগের থিম ইন্সটল করলেই আগের মত করে ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন।
কিভাবে থিম ইন্সটল করবেন, কিভাবে ডিজাইন চেঞ্জ করবেন তা জানতে দেখুন উপরের ভিডিও ক্লিপটি।
ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন্স –
এখন আপনে প্রশ্ন করতে পারেন ‘প্লাগিন্স জিনিসটা কি?’, উত্তর হইল – আপনে ওয়েবসাইট বানায়া কত সহজে সেইটা মেইন্টেইন করতে পারেন, কত সুন্দরভাবে আপনি সাজাইতে পারেন, সেইটাই আপনেরে করে দ্যায় প্লাগিন্স; আপনে যত প্রকার চিন্তা করতে পারেন যে আপনের ওয়েবসাইটে এইটা দরকার, ওইটা দরকার তার সবরকম সমাধান আপনে পাবেন প্লাগিন্সে। এক এক প্লাগিন্সের কাজ এক এক রকম। কোনটা ইউজ করা হয় ওয়েবসাইট খুব স্পিডি করতে, আবার কোনটা ব্যবহার করা হয় রঙ বেরঙ্গের কন্টাক্ট ফর্ম বানাইতে। ড্যাশবোর্ড থেকে যেভাবে থীম ইন্সটল করবেন ঠিক তেমনি ভাবেই প্লাগিন্সও ইন্সটল করতে হবে। ভিডিও ক্লিপসে পুরা জিনিসটাই খুব সহজে বুঝানোর ট্রাই করা হইছে। দেখে নিতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্লাগিন্স –
১. WordPress SEO by Yoast – এখনকার সময়ে যে কোন ওয়েবসাইটের জন্যই SEO খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। SEO র জন্য মেটা ডাটা লাগে, মেটা ডেসক্রিপশন লাগে, কিওয়ার্ড লাগে; এই প্লাগিন্স ইউজ করলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের এই সমস্ত ইনফরমেশন পাবেন এক ক্লিকেই
২. W3 Total Cache – এই প্লাগিন্সের কাজ হইল, আপনের ওয়েবসাইটের স্পীড বাড়ানো। ধরেন আপনে একটা ওয়েবসাইট সার্চ দিলেন, সেইটা ভালো কইরা খুলতে লাগে ৪০ সেকেন্ড, নিশ্চয়ই ততক্ষনে আপনে ওয়েবসাইট দ্যাখার আগ্রহই হারায় ফেলবেন। এই কারনে ওয়েবসাইটের স্পীড খুবই ইম্পরট্যান্ট। এই প্লাগিন্স দিয়ে মূলত ওয়েবসাইটের স্পীড বাড়ানোর কাজটাই করা হয়
৩. WP-DBManager – আপনি আজকে যে ওয়েবসাইট চালাইতেছেন, সেইটা কোন কারনে হ্যাক হইতেই পারে। বা ওয়েবসাইটের কোন প্রবলেম হইতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কি আপনার আবার প্রথম থেকে সব বানানো লাগবে? মোটেও না, ইন্সটল করে নেন এই প্লাগিন্সটা, এইটা প্রতিদিন আপনার ওয়েবসাইটের অটোমেটিক ব্যাকআপ রাখবে, আর ব্যাকআপ ফাইলটাও অটোম্যাটিক শেয়ার করবে আপনার গুগল ড্রাইভে; এর মানে ওয়েবসাইট পুরা নষ্ট হইলেও প্রবলেম নাই, আপনার কাছে তো এক কপি থাকলোই
৪. Digg Digg – অনেকেই ব্লগ লেখেন, ব্লগ লেখার পরে একটা অপশন রাখতে চান যাতে সেই লেখাটা খুব সহজে ফেসবুক বা টুইটারে শেয়ার করা যায়, সেই জন্য এই আছে এই প্লাগিন্স। আপনি যদি আপনার সাইটে এই প্লাগিন্স ইন্সটল করে নেন তাহলে আপনার সমস্ত লেখার পর অটোম্যাটিক একটা অপশন আসবে শেয়ার করার জন্য। শুধু তাই না, আপনার লেখাটা কতবার শেয়ার হইছে সেইটাও জানায় দিবে এই প্লাগিন্স
৫. URL shortened – মাঝে মাঝেই দেখবেন, কিছু কিছু ওয়েব ঠিকানা থাকে বিরাট বড় বড়, এখন আপনি যদি একটা পোস্ট লেখেন আর সেইটার ওয়েব ঠিকানা বা URL যদি হয় এত্ত বড়, তাইলে সেইটা দেখতেও বাজে দ্যাখায়, আবার শেয়ারের জন্যও প্রবলেম। তাই এই প্রবলেম দূর করতে ইউজ করতে পারেন URL SHORTENED প্লাগিন্স। এই প্লাগিন্স ইউজ করলে আপনার সমস্ত URL কেটে ছোট হয়ে যাবে, যেইটা দেখতেও সুন্দর, শেয়ার করেও শান্তি। ধরেন আপনের URL যদি হয় – “www.mokhles.com/blog/dsghafahs$#%@^bhgvsshuhbc%^$” তাইলে এই প্লাগিন্স ইউজ করলে এই ঠিকানাটাই হয়ে যাবে “goo.gl/dc.ng” এই টাইপ।
ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি এবং কিছু কথা. . .
আজ প্রকাশ হল ‘ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরি’ কোর্সের সর্বশেষ পর্ব। আজকের পর্বে কোন ভিডিও ক্লিপিংস রাখা হয় নি কারন আজকের পর্বে নতুন করে শেখানোর কিছুই নেই; আজকে শুধু দেখানো হবে ওয়ার্ডপ্রেস এর সিকিউরিটি সম্পর্কিত কিছু বিষয়, তাছাড়া নতুন ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার পরই যা যা ভুল হতে পারে – সেগুলো নিয়ে। আর থাকবে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বিশেষ কিছু ‘উপদেশ’; তো চলেন শুরু করা যাক শেষ পর্ব. . .
ওয়ার্ডপ্রেসের সিকিউরিটি –
১. ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার পর সচরাচর সবাই যে ভুলটা করে থাকেন তা হল ইউজার নেম দেন – admin; এই ভুল অবশ্যই কখনো করবেন না, কারন ওয়ার্ডপ্রেসের বেশিরভাগ ইউজার তাদের ওয়েবসাইটের বা ব্লগের ইউজারনেম হিসেবে ইউজ করেন ‘admin’ যা হ্যাকার দের ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য সুবিধাজনক। সুতরাং ইউজার নেম হিসেবে ‘admin’ কখনোই ইউজ করবেন না। আর যদি ভুলে করেই ফেলেন সে ক্ষেত্রে আপনার ড্যাশবোর্ডে এর ইউজার অপশনে গিয়ে অন্য নামে নতুন প্রোফাইল তৈরি করুন, তারপর ইউজার হিসেবে ‘admin’ ডিলিট করে দিন।
২. সবসময় অতি অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস এর লেটেস্ট ভার্সন ইউজ করবেন, ধরেন এখন যদি ওয়ার্ডপ্রেসের ভার্সন – ৩.৮ চলে তাহলে অবশ্যই ৩.৮ ই সেটআপ দিবেন, কখনো ৩.৭ বা ৩.৫ সেটআপ দেবেন না; এতে করে ওয়ার্ডপ্রেসে নতুন থিম বা প্লাগিন্স ইন্সটল করার সময় সমস্যা হতে পারে।
৩. যদিও ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দিতে মাত্রই ১৬ মেগাবাইট জায়গা লাগে, কিন্তু তারপরও ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দিতে আপনি অবশ্যই মিনিমাম ৪০ মেগাবাইট জায়গা রেখে তারপর সেটআপ দিবেন, ওই ৪০ মেগাবাইটের ১৬ মেগাবাইট চলে যাবে ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য আর বাকিটুক খালি থাকবে। কখনোই এর চেয়ে কম জায়গায় ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেবেন না, সে ক্ষেত্রে প্রায়শ পুরো ওয়েবসাইট ডাটাবেস সহ ক্রাশ করে।
৪. ওয়ার্ডপ্রেসে পুরো ওয়েবসাইট তৈরির পর অবশ্যই এর ব্যাকআপ রেখে নেবেন, ব্যাকআপের জন্য ‘wp-db backup’ এই প্লাগিন্স ইউজ করতে পারেন। এই প্লাগিন্স আপনার পুরো সাইট প্রতিদিন ব্যাকআপ তো করবেই পাশাপাশি ব্যাকআপ ফাইল পাঠিয়ে দেবে আপনার মেইলে।
৫. ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য দুই ধরনের থিম পাওয়া যায়, একটা ফ্রী থিম আর আরেকটা পেইড থিম, পেইড থিমগুলো সাধারনত ১০-২০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আপনি যে কোন একটা ইউজ করতে পারেন; তবে অতি অতি অবশ্যই কখনো কোন পেইড থিম গুগলে ফ্রী পাইলেই ইউজ করতে যাবেন না; কারন এই থিমগুলাতে প্রচুর বাগ থাকে যার অর্থ আপনি এই থিম ইউজ করতে গেলেই আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার সম্ভবনা প্রায় ৯৯.৯৯ ভাগ। তবে ফ্রী থিম যদি ইউজ করেন সেই ক্ষেত্রে http://wordpress.org/themes/ ওয়েবসাইটে যে সব ফ্রী থিম পাওয়া যায় সেইটাই ইউজ করা সবচেয়ে ভালো।
৬. ধরেন আপনি ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতেছেন, ব্রাউজ করতে করতেই হঠাৎ একটা ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর ডিজাইন আপনার মারাত্মক মনে ধরল। আপনার ইচ্ছা হইল ঠিক এইরকম একটা ডিজাইনের ওয়েবসাইট আপনি বানাবেন। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটের থিমের নাম কি, বা কোথায় পাওয়া যাবে আপনি কিছুই জানেন না, সেই ক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? সেই ক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করবে http://www.wpthemedetector.com/ এই ওয়েবসাইটটি; আপনি যেই ওয়েবসাইটের ডিজাইন পছন্দ করেছেন সেই ওয়েবসাইটের URL কপি করে wpthemedetector এর খালি ঘরে বসিয়ে দিলেই ওই ওয়েবসাইট কি ডিজাইন ইউজ করেছে, ওই থিম এর অথর কে, ওই থিম কোথায় পাওয়া যাবে সব বিস্তারিত আপনি পেয়ে যাবেন।
৭. ওয়েবসাইটের পার্মালিংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। পার্মালিংক মানে আপনি যে URL টা পান সেইটা। ধরেন আমি একটা ব্লগ লেখলাম, ব্লগের নাম ‘ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ’; এখন লেখাটা পাবলিশ করার পর আপনি যে ডিফল্ট URL পাবেন সেটা হচ্ছে – www.shikkhok.com/post-123; এই ধরনের লিঙ্ক মাঝে মাঝেই বিব্রতকর আবার দেখতেও অসুন্দর, তার চেয়ে আপনি যদি এইরকম লিঙ্ক পান www.shikkhok.com/ওয়ার্ডপ্রেস-সেটআপ তাহলে নিশ্চয়ই এটা আরও বেশি সুন্দর। তো এই সুন্দরটুক করার জন্য চেঞ্জ করে নিন আপনার ওয়েবসাইটের পার্মালিংক। ড্যাশবোর্ডে গিয়ে পার্মালিংক অপশনে গেলেই আপনাকে দেখিয়ে দেবে আপনি কি ধরনের লিঙ্ক চান, আর একবার সিলেক্ট করে দিলেই বাকি প্রত্যেকবার অটোম্যাটিকলি আপনি ওই ধরনের লিঙ্ক পেয়ে যাবেন।
৮. মাঝে মধ্যেই ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের ডিফল্ট ফীড ছাড়াও আরও অনেক ধরনের ফীড জেনারেট করে; এই ধরেন সব পোস্টের জন্য পোস্ট ফীড, কমেন্টের জন্য কমেন্ট ফীড; যেগুলার কোন কাজ নাই, কোন কিছুই করে না বরং বেহুদা ওয়েবসাইটের ফীড বাড়ায়; এই ধরনের সমস্যা সল্ভ করতে আপনার ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ড থেকে Appearance>Editor অপশনে যেয়ে থিমের ফাংশন ফিল্ডে লিখে দিন নিচের কোডটি
ব্যাস এরপর থেকে ওয়ার্ডপ্রেস আর এই বেহুদা ফীড তৈরি করবে না।
৯. মাঝে মাঝেই যখন আপনি কোন পেজ বা পোস্ট এডিট করতে যাবেন তখন দেখবেন পাশের বক্সে একটা লেখা আসে ‘Revisions 3’ এর অর্থ হচ্ছে আপনি ওই পেজের লেখাগুলো ৩ বার এডিট করেছেন। আপনি যতবার লেখা এডিট করবেন ততবার এই রিভিশন এর সংখ্যা বাড়বে আর আপনার এই সমস্ত ফাইলগুলা ওয়ার্ডপ্রেস নিজের ডাটাবেসে জমা রাখবে, এর জন্য যে প্রবলেমগুলা হয় সেটা হচ্ছে প্রচুর আননেসেসারি ফাইল থাকার কারনে লোডিং টাইম বাড়ে, এর ফলে ওয়েবসাইট স্লো হয়ে যায়, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার ওয়েবসাইটের wp-config.php ফাইলের যে কোন জায়গায় কপি করে দিন নিচের কোডটি
এরপর থেকে আপনার ওয়েবসাইট আর কোন রিভিশন তৈরিও করবে না, রিভিশন জমাও করে রাখবে না।
১০. আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমানে কমেন্ট আসতেই পারে, তার মানে এই না সব কমেন্টই আপনার ওয়েবসাইট বা লেখা সংক্রান্ত, কিছু কিছু স্প্যাম কমেন্টও আসতে পারে যা আপনাকে বিব্রত করবে, এই ধরনের অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আপনি ইউজ করতে পারেন ‘কমেন্ট মডারেশন’ প্লাগিন্স, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি ওয়েবসাইটের বা ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট পেজের কমেন্ট বক্সই বন্ধ করে দিতে পারেন।
১১. ওয়ার্ডপ্রেসের কনফিগারেশন ফাইলেই থাকে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সংক্রান্ত সমস্ত ইনফরমেশন এবং পাসওয়ার্ড। তার মানে বুঝতেই পারতেছেন এইটা কত ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস, এখন এই ফাইলটা যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইট পুরোপুরি হ্যাক করা তার ১ মিনিটের কাজ। সুতরাং এই ফাইল যেভাবেই হোক আপনাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই হবে। এই কাজটি করতে আপনার হোস্টিং এর .htaccess ফাইলে যেয়ে বসিয়ে দিন নিচের কোডটুকু,
এরপর কেউই আর আপনার ওয়েবসাইটের কনফিগারেশন ফাইল খুঁজে পাবার প্রশ্নই ওঠে না।
১২. কোন ওয়েবসাইট চালু করার পরই গুগল এইটা তার ইনফরমেশন ডাটাবেসে নিয়ে ন্যায় এবং দুনিয়ার সবার কাছে সেইটা শো করতে থাকে, এখন আপনি যদি একটা ওয়েবসাইট মাত্রই খোলেন আর তাতে কিছুই যোগ না করেন তখন ইনফরমেশন দেখানোর জন্য গুগল সেই ওয়েবসাইটে কিছুই খুঁজে পায় না বরং কোন ইনফরমেশনই খুঁজে না পাওয়ার কারনে আপনার ওয়েবসাইটের ইম্প্রেশন খারাপ হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার পরপরই আপনার ইনডেক্স অফ করে রাখবেন; এর ফলে গুগল আর আপনার ওয়েবসাইটের ইনফরমেশন নিজের ডাটাবেসে অ্যাড করবে না; তবে পুরো সাইট তৈরি করার পর অবশ্যই আপনার ইনডেক্স আবার অন করে দেবেন।
তো ওয়ার্ডপ্রেসের বেসিক কোর্স এইটুকুই। আজ এই পর্ব দিয়েই শেষ হয়ে যাবে আমাদের ‘ওয়ার্ডপ্রেস পরিচিতি’ কোর্স; সেটআপ বা আরও অন্যান্য জিনিসের জন্য দেখে নিতে পারেন আগের পর্বগুলো। যে কোন সমস্যায় আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই ওয়েবসাইটে অথবা লিখতে পারেন নিচের কমেন্ট বক্সে। সবাই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।
শেষকথা – যদিও CMS এর জন্য বা ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য কোন ধরনের কোডিং জ্ঞান লাগে না বলা হয়, তবুও আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশী চমৎকার ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তবে এই কোডিং জ্ঞান গুলো থাকা বাধ্যতামূলক। আর যারা ফ্রীল্যান্সিং এ আগ্রহী তারা সামান্য ওয়ার্ডপ্রেস জ্ঞান দিয়ে কিছু টাকা আয় করতে পারলেও ভালো কিছু করার জন্য আরও অনেক কিছুই শিখতে হবে। আর শেখার জন্য সবচেয়ে ভালো ইন্সটিটিউশন একটাই – গুগল।
প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ার্ডপ্রেস ছিল একটা ব্লগিং প্লাটফর্ম। মানে আপনের একটা ব্লগ অ্যাড্রেস থাকবে, সেইটাতে আপনি ব্লগিং করবেন। ধরেন আপনে একটা ব্লগ খুললেন প্রথম আলো ব্লগে, আপনের খুব ইচ্ছা এইখানে ব্লগ লেইখা ফাটায় ফেলবেন। তো আপনে একটা ব্লগ লেখলেন, লেখলেন “আমার নাম মুকলেস, আমার বাম হাত এইটা, আমার পাঁচটা আঙ্গুল আছে, আমার দুইটা হাত, দুইটা পা……”; তো এই ব্লগ লেখার পরে আপনে পোস্ট কইরা দিলেন; দ্যাখা গেল ব্লগের মডারেটর সাহেব আপনের সব লেখা কাইট্টা ছাইটা লেইখা রাখছে “আমি মুকলেস”; এই দেইখা আপনি হতাশায় ডিসিশন নিলেন যে এই ব্লগের সাথে আপনে আর নাই, আপনি নিজের ব্লগ খুলবেন, নিজের যা মন চায় তাই লিখবেন। প্রথম দিকে ওয়ার্ডপ্রেস আপনাকে এই ব্লগ খোলার ই সুযোগ কইরা দিত।
দিন পাল্টাইছে, পাল্টাইছে ওয়ার্ডপ্রেস; পালটাইতে পালটাইতে ওয়ার্ডপ্রেস এখন মহিরুহ। টাইমস এর হিসাব মতে এখন সারা দুনিয়ায় প্রায় ৫৩ ভাগ ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো। কারন এইটা দিয়ে সাইট বানাইতে কোন কোডিং জানা লাগে না, মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে যেভাবে লেখা যায়, ওয়ার্ডপ্রেসেও একইভাবে লেখা যায়, এর উপর আছে হাজার ধরনের প্লাগিন্স; যেইটা দিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইট সাজাইতে পারবেন মনের মত। আর ওয়ার্ডপ্রেস এর সবচেয়ে অসাধারণ দিক হইল এইটা পুরা ফ্রী। এক টাকাও কেউ চাইব না আপনের কাছে কোন দিন।
ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রকারভেদ –
ওয়ার্ডপ্রেস মূলত দুই ধরনের সার্ভিস প্রোভাইড করে, দুইটাই ফ্রী –
১. wordpress.com
২. wordpress.org
১. wordpress.com
wordpress.com এ আপনি একটা ফ্রী সাবডোমেইন পাবেন, প্রায় ২ জিবির মত হোস্টিং পাবেন, আর পাবেন ওয়ার্ডপ্রেস এর নির্দিষ্ট করে দেয়া কয়েকটা ডিজাইন, যেগুলার কেতাবি নাম ‘ওয়ার্ডপ্রেস থিম’; আপনি যেভাবে নরমাল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলছেন ঠিক সেইভাবে নরমালি আপনি wordpress.com এ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন আর ধুমায় ব্লগিং করতে পারেন। তবে এর সমস্যাও আছে, wordpress.com এ খোলা সাইট বা ব্লগে আপনি কোন ধরনের চেঞ্জ করতে পারবেন না, প্লাস আপনাকে যেই ওয়েবসাইট ঠিকানা দেওয়া হবে সেইটা হবে এইরকম – mukhles.wordpress.com
২. wordpress.org
এখন ধরা যাক আপনের উপরের অ্যাড্রেস টা (mukhles.wordpress.com) পছন্দ হয় নাইক্কা। আপনি বানাইতে চান www.mukhles.com সেই ক্ষেত্রে আপনার ইউজ করতে হবে wordpress.org; এইটা করার জন্য রেজিস্ট্রেশন এর কোন বালা মুসিবত নাই; জাস্ট একটা ডোমেইন আর একটা হোস্টিং লাগবে। আমাদের এই কোর্সে wordpress.org দিয়ে কিভাবে ওয়েবসাইট বানানো যায় সেইটাই শিখব। আমরা এই পুরা টিউটোরিয়ালে একটা পেইড ডোমেইন এবং হোস্টিং ইউজ করব। আপনারা চাইলে বা আপনাদের থাকলে আপনারাও পেইড ডোমেইন হোস্টিং প্র্যাকটিসের জন্য ইউজ করতে পারেন, বা অনেক ফ্রী হোস্টিং এবং ডোমেইন কোম্পানি আছে যারা ফ্রী তে আপনাদের ডোমেইন হোস্টিং দিবে, সেইটাও ইউজ করতে পারেন। আমি নিচে কিছু লিস্ট দিয়ে দিলাম, এছাড়াও অনেকে আছে কিন্তু ফ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে এরাই বেস্ট। অবশ্য আপনি যদি কোন প্র্যাক্টিস না কইরা শুধুই শিখতে চান সেই ক্ষেত্রেও প্রবলেম নাই, জাস্ট টিউটোরিয়াল আর ভিডিও ক্লিপস গুলা খুব মন দিয়া খেয়াল কইরেন।
ফ্রী ডোমেইন – .tk ডোমেইন
ফ্রী হোস্টিং – FreeHostia, 000webhost
ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপের পদ্ধতি –
ওয়ার্ডপ্রেস দুইভাবে সেটআপ দেওয়া যায়,
১. ম্যানুয়াল
২. অটোমেটিক
দুইভাবেই আপনি একই রকম রেজাল্ট পাবেন, তবে পার্থক্য হইল আপনি যদি ম্যানুয়ালি সেটআপ দিতে চান তবে আপনার সেটআপ দিতে মিনিমাম ত্রিশ মিনিট লাগবেই, আর যদি অটোমেটিক ইন্সটল দিতে চান তাহলে লাগবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তো আজকে আমরা শিখব কিভাবে অটোমেটিকলি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করবেন।
আমরা এই টিউটোরিয়ালে ব্যাবহার করেছি একটি প্র্যাকটিস ডোমেইন (practice.shadnanmahmud.com). আমাদের ইচ্ছা যে এই ডোমেইন এই আমরা ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দিব। এখন অটোমেটিক সেটআপ দেওয়ার জন্য আপনাকে চলে যেতে হবে এই ডোমেইন (আসলে সাবডোমেইন) এর কন্ট্রোল প্যানেলে। যারা সাধারনত হোস্টিং প্রোভাইড করে তারা এখন এর সাথে ওয়েবসাইট বানানোর জন্য বিভিন্ন APPS INSTALLER ও জুড়ে দ্যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইউজ করা INSTALLER হচ্ছে SOFTACULOUS. আপনার যদি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি চেক করে দেখেন, আপনার কন্ট্রোল প্যানেল এও আপনি এই ধরনের INSTALLER পাবেন। INSTALLER এর অনেক অপশন গুলার মধ্যে থেকে WordPress এ ক্লিক করেন।
ক্লিক করা মাত্রই আপনি ওই ইন্সটলার এর হোমপেজে চলে যাবেন। সেখানে আপনাকে ইন্সটল এর অপশন দেখাবে –
ইন্সটল এ ক্লিক করার পর আপনার কাছে খালি ঘর পুরনের জন্য একটা নতুন পেজ আসবে। সেই পেজে অপশন গুলো পাবেন সাধারণত এমন –
প্রত্যেকটা ঘর পূরণ করা লাগবে না, তবে যেগুলো ইম্পরট্যান্ট সেগুলা হল ডাটাবেস এর ঘর, ব্লগের নাম, ব্লগের ডেসক্রিপশন, আপনার ইউজার নেম আর সবশেষে পাসওয়ার্ড। ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা আপনি যতবার আপনার ওয়েবসাইটে কোন কিছু এডিট করতে চাইবেন তত বার আপনাকে এই পাসওয়ার্ড আর ইউজার নেম ইউজ করতেই হবে। এগুলো ছাড়াও দুইটা অপশন সাধারনত আসে – একটা টেবিল প্রিফিক্স আর আরেকটা মাল্টিসাইট, এই দুইটা ঘরে হাত দেয়ার কোন দরকার নাই। থাক এই দুইটা ঘর নিজের মত।
তো এরপর যেখানে মেইল অ্যাড্রেস চায় সেখানে নিজের মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দেন। এরপর ইন্সটল নামের যে বাটনটা আছে তাতে দেন গুতা। ব্যাস কাহিনী খতম।
এখন আপনার যেই ওয়েবসাইট সেইটা রিলোড দিলেই দেখবেন খুবই চমৎকার ভাবে সেখানে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল হয়ে গেছে। ওয়ার্ডপ্রেস-এ কোন এডিট বা অন্য কিছু করার জন্য আপনাকে এখন যেতে হবে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ডে। ড্যাশবোর্ড-এ লগ ইন করতে আপনার ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস এর পর লিখুন /wp-admin. মানে আপনার ওয়েবসাইট যদি হয় ‘www.mukhles.com’ তাহলে আপনার লিখতে হবে ‘www.mukhles.com/wp-admin’
অথবা, আপনার ওয়েবসাইটের নাম যদি হয় ‘practice.shadnanmahmud.com’ তাহলে আপনার লিখতে হবে ‘practice.shadnanmahmud.com/wp-admin’; এই অ্যাড্রেস এ গেলে আপনি নিচের মত একটা পেজ পাবেন।
সেখানে ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করলেই পেয়ে যাবেন আপনার ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ড। এই ড্যাশবোর্ড থেকেই আপনি আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানুয়াল সেটআপ
গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস অটোম্যাটিক ইন্সটল করতে হয়। আজকে শিখব কিভাবে ম্যানুয়ালি ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করা যায়।
ম্যানুয়ালি ইন্সটল এর জন্য যা যা লাগবে –
১. ফাইল ট্রান্সফার সফটওয়্যার (FTP CLIENT)
২. ওয়ার্ডপ্রেস ফাইল
৩. একটা MYSQL ডাটাবেস
ফাইল ট্রান্সফার সফটওয়্যার –
এইটা সাধারণত FTP CLIENT নামেই বেশী পরিচিত। এর কাজ হইল এক জায়গা থেকে ফাইল আরেক জায়গায় ট্রান্সফার করা। বিভিন্ন ধরনের ফাইল ট্রান্সফার সফটওয়্যার পাওয়া যায় অনলাইনে, তবে সবচেয়ে ভালো কাজ করে FILEZILLA. এইটা ছাড়াও আপনি WINSCP ও ইউজ করতে পারেন। এই পর্বে আমরা ট্রান্সফার প্রটোকল হিসেবে FILEZILLA ব্যাবহার করেছি।
ওয়ার্ডপ্রেস ফাইল –
এইটাই মূল ফাইল, আপনি এই ফাইলটাই মূলত ট্রান্সফার করবেন। ফাইল নামাতে হবে wordpress.org এই ঠিকানা থেকে। আপনি দুইভাবে নামাতে পারেন, একটা .zip হিসেবে অথবা tar.gz হিসেবে। আপনি অবশ্যই .zip হিসেবে নামাবেন। নামানোর পদ্ধতি খুব সোজা, যেভাবে ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করেন সেভাবে DOWNLOAD বাটনে চাপ দিলেই আপনার কম্পিউটারে ফাইল ডাউনলোড হওয়া শুরু হবে।
MYSQL ডাটাবেস –
ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার জন্য একটা ডাটাবেস তৈরি করা লাগবে, কঠিন কিছুই না। আপনার ওয়েবসাইটের কন্ট্রোল প্যানেলে যান, সেখানে MYSQL ডাটাবেস তৈরির অপশন পাবেন। ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে তৈরি করে ফেলুন ডাটাবেস।
এখন আপনার কাছে ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে, তো চলেন শুরু করা যাক। প্রথমে, ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভার খুলুন। এখন ওয়ার্ডপ্রেস এর সমস্ত ফাইলগুলো আপনার ওয়েব সার্ভারের public_html এই ফোল্ডারে কপি করে নিন। যদি আপনি ২৫৬ কেবিপিএস এর নেট ইউজ করেন তাহলে সব ফাইল কপি হতে সময় লাগবে ২৫ মিনিট।
সমস্ত ফাইল কপি হয়ে গেলে এইবার আপনার ওয়েবসাইট খুলুন। দেখবেন সেখানে আপনার ডাটাবেস এর ইনফরমেশন পূরণ করার জন্য একটি খালি পেজ পাবেন। এই পেজে ডাটাবেস এর সমস্ত ইনফরমেশন দিয়ে SUBMIT বাটনে ক্লিক করুন। এইবার আবার ওয়েবসাইট রিলোড দিলে দেখবেন আপনার ওয়েবসাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল হয়ে গেছে।
ওয়ার্ডপ্রেস থীম –
ওয়ার্ডপ্রেস ক্যান এত বিখ্যাত বলতে পারেন? শুধুমাত্র এর মেইন্টেইনেন্স সুবিধার জন্যই না, এর সবচেয়ে বড় কারন আপনি যখন ইচ্ছা তখন আপনার সমস্ত লেখা ঠিকঠাক রেখেই যেমন ইচ্ছা তেমন একটা ডিজাইন আপনি ওয়েবসাইটে লাগাইতে পারেন। কোডিং করে ওয়েবসাইট বানাইলে কি কি প্রবলেম হইতে পারে? ধরেন আপনি ১৫ দিন খেটে ম্যানুয়ালি কোড ইনপুট করে একটা ওয়েবসাইট বানাইলেন, সেইটার মধ্যে বিভিন্ন কনটেন্ট যোগ করলেন। এরপর দ্যাখা গেল ২ মাস পর আপনের অন্য একটা ডিজাইন পছন্দ, তখন তো আপনের পুরা কাজ আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। এইটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।
এখন আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করেন, তাইলে এই বিরক্তি থেকে পুরা মুক্তি। আজকে একটা ডিজাইন পছন্দ, কালকে ওইটা ভাল লাগতেছে না; তো কি করবেন? থিম অপশনে যাবেন, নতুন থিম এর জন্য সার্চ দিবেন, যেইটা ভাল লাগবে সেইটাতে ইন্সটল বাটনে টিপ দিলেই আপনার পুরা ওয়েবসাইট এর ডিজাইন চেঞ্জ হয়ে যাবে, সাথে সাথে আপনার যে আগের লেখা, ছবি যা যা আছে তার সবই ঠিক জায়গাতেই থাকবে, কোন অদল বদল নাই।
আবার আপনার যদি ২ মাস পর মনে হয় “নাহ আগের ডিজাইনটাই তো ভালো ছিল”, তাইলেও কোন প্রবলেম নাই আপনি আগের থিম ইন্সটল করলেই আগের মত করে ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন।
কিভাবে থিম ইন্সটল করবেন, কিভাবে ডিজাইন চেঞ্জ করবেন তা জানতে দেখুন উপরের ভিডিও ক্লিপটি।
ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন্স –
এখন আপনে প্রশ্ন করতে পারেন ‘প্লাগিন্স জিনিসটা কি?’, উত্তর হইল – আপনে ওয়েবসাইট বানায়া কত সহজে সেইটা মেইন্টেইন করতে পারেন, কত সুন্দরভাবে আপনি সাজাইতে পারেন, সেইটাই আপনেরে করে দ্যায় প্লাগিন্স; আপনে যত প্রকার চিন্তা করতে পারেন যে আপনের ওয়েবসাইটে এইটা দরকার, ওইটা দরকার তার সবরকম সমাধান আপনে পাবেন প্লাগিন্সে। এক এক প্লাগিন্সের কাজ এক এক রকম। কোনটা ইউজ করা হয় ওয়েবসাইট খুব স্পিডি করতে, আবার কোনটা ব্যবহার করা হয় রঙ বেরঙ্গের কন্টাক্ট ফর্ম বানাইতে। ড্যাশবোর্ড থেকে যেভাবে থীম ইন্সটল করবেন ঠিক তেমনি ভাবেই প্লাগিন্সও ইন্সটল করতে হবে। ভিডিও ক্লিপসে পুরা জিনিসটাই খুব সহজে বুঝানোর ট্রাই করা হইছে। দেখে নিতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্লাগিন্স –
১. WordPress SEO by Yoast – এখনকার সময়ে যে কোন ওয়েবসাইটের জন্যই SEO খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। SEO র জন্য মেটা ডাটা লাগে, মেটা ডেসক্রিপশন লাগে, কিওয়ার্ড লাগে; এই প্লাগিন্স ইউজ করলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের এই সমস্ত ইনফরমেশন পাবেন এক ক্লিকেই
২. W3 Total Cache – এই প্লাগিন্সের কাজ হইল, আপনের ওয়েবসাইটের স্পীড বাড়ানো। ধরেন আপনে একটা ওয়েবসাইট সার্চ দিলেন, সেইটা ভালো কইরা খুলতে লাগে ৪০ সেকেন্ড, নিশ্চয়ই ততক্ষনে আপনে ওয়েবসাইট দ্যাখার আগ্রহই হারায় ফেলবেন। এই কারনে ওয়েবসাইটের স্পীড খুবই ইম্পরট্যান্ট। এই প্লাগিন্স দিয়ে মূলত ওয়েবসাইটের স্পীড বাড়ানোর কাজটাই করা হয়
৩. WP-DBManager – আপনি আজকে যে ওয়েবসাইট চালাইতেছেন, সেইটা কোন কারনে হ্যাক হইতেই পারে। বা ওয়েবসাইটের কোন প্রবলেম হইতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কি আপনার আবার প্রথম থেকে সব বানানো লাগবে? মোটেও না, ইন্সটল করে নেন এই প্লাগিন্সটা, এইটা প্রতিদিন আপনার ওয়েবসাইটের অটোমেটিক ব্যাকআপ রাখবে, আর ব্যাকআপ ফাইলটাও অটোম্যাটিক শেয়ার করবে আপনার গুগল ড্রাইভে; এর মানে ওয়েবসাইট পুরা নষ্ট হইলেও প্রবলেম নাই, আপনার কাছে তো এক কপি থাকলোই
৪. Digg Digg – অনেকেই ব্লগ লেখেন, ব্লগ লেখার পরে একটা অপশন রাখতে চান যাতে সেই লেখাটা খুব সহজে ফেসবুক বা টুইটারে শেয়ার করা যায়, সেই জন্য এই আছে এই প্লাগিন্স। আপনি যদি আপনার সাইটে এই প্লাগিন্স ইন্সটল করে নেন তাহলে আপনার সমস্ত লেখার পর অটোম্যাটিক একটা অপশন আসবে শেয়ার করার জন্য। শুধু তাই না, আপনার লেখাটা কতবার শেয়ার হইছে সেইটাও জানায় দিবে এই প্লাগিন্স
৫. URL shortened – মাঝে মাঝেই দেখবেন, কিছু কিছু ওয়েব ঠিকানা থাকে বিরাট বড় বড়, এখন আপনি যদি একটা পোস্ট লেখেন আর সেইটার ওয়েব ঠিকানা বা URL যদি হয় এত্ত বড়, তাইলে সেইটা দেখতেও বাজে দ্যাখায়, আবার শেয়ারের জন্যও প্রবলেম। তাই এই প্রবলেম দূর করতে ইউজ করতে পারেন URL SHORTENED প্লাগিন্স। এই প্লাগিন্স ইউজ করলে আপনার সমস্ত URL কেটে ছোট হয়ে যাবে, যেইটা দেখতেও সুন্দর, শেয়ার করেও শান্তি। ধরেন আপনের URL যদি হয় – “www.mokhles.com/blog/dsghafahs$#%@^bhgvsshuhbc%^$” তাইলে এই প্লাগিন্স ইউজ করলে এই ঠিকানাটাই হয়ে যাবে “goo.gl/dc.ng” এই টাইপ।
ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি এবং কিছু কথা. . .
আজ প্রকাশ হল ‘ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরি’ কোর্সের সর্বশেষ পর্ব। আজকের পর্বে কোন ভিডিও ক্লিপিংস রাখা হয় নি কারন আজকের পর্বে নতুন করে শেখানোর কিছুই নেই; আজকে শুধু দেখানো হবে ওয়ার্ডপ্রেস এর সিকিউরিটি সম্পর্কিত কিছু বিষয়, তাছাড়া নতুন ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার পরই যা যা ভুল হতে পারে – সেগুলো নিয়ে। আর থাকবে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বিশেষ কিছু ‘উপদেশ’; তো চলেন শুরু করা যাক শেষ পর্ব. . .
ওয়ার্ডপ্রেসের সিকিউরিটি –
১. ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার পর সচরাচর সবাই যে ভুলটা করে থাকেন তা হল ইউজার নেম দেন – admin; এই ভুল অবশ্যই কখনো করবেন না, কারন ওয়ার্ডপ্রেসের বেশিরভাগ ইউজার তাদের ওয়েবসাইটের বা ব্লগের ইউজারনেম হিসেবে ইউজ করেন ‘admin’ যা হ্যাকার দের ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য সুবিধাজনক। সুতরাং ইউজার নেম হিসেবে ‘admin’ কখনোই ইউজ করবেন না। আর যদি ভুলে করেই ফেলেন সে ক্ষেত্রে আপনার ড্যাশবোর্ডে এর ইউজার অপশনে গিয়ে অন্য নামে নতুন প্রোফাইল তৈরি করুন, তারপর ইউজার হিসেবে ‘admin’ ডিলিট করে দিন।
২. সবসময় অতি অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস এর লেটেস্ট ভার্সন ইউজ করবেন, ধরেন এখন যদি ওয়ার্ডপ্রেসের ভার্সন – ৩.৮ চলে তাহলে অবশ্যই ৩.৮ ই সেটআপ দিবেন, কখনো ৩.৭ বা ৩.৫ সেটআপ দেবেন না; এতে করে ওয়ার্ডপ্রেসে নতুন থিম বা প্লাগিন্স ইন্সটল করার সময় সমস্যা হতে পারে।
৩. যদিও ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দিতে মাত্রই ১৬ মেগাবাইট জায়গা লাগে, কিন্তু তারপরও ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দিতে আপনি অবশ্যই মিনিমাম ৪০ মেগাবাইট জায়গা রেখে তারপর সেটআপ দিবেন, ওই ৪০ মেগাবাইটের ১৬ মেগাবাইট চলে যাবে ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য আর বাকিটুক খালি থাকবে। কখনোই এর চেয়ে কম জায়গায় ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেবেন না, সে ক্ষেত্রে প্রায়শ পুরো ওয়েবসাইট ডাটাবেস সহ ক্রাশ করে।
৪. ওয়ার্ডপ্রেসে পুরো ওয়েবসাইট তৈরির পর অবশ্যই এর ব্যাকআপ রেখে নেবেন, ব্যাকআপের জন্য ‘wp-db backup’ এই প্লাগিন্স ইউজ করতে পারেন। এই প্লাগিন্স আপনার পুরো সাইট প্রতিদিন ব্যাকআপ তো করবেই পাশাপাশি ব্যাকআপ ফাইল পাঠিয়ে দেবে আপনার মেইলে।
৫. ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরির জন্য দুই ধরনের থিম পাওয়া যায়, একটা ফ্রী থিম আর আরেকটা পেইড থিম, পেইড থিমগুলো সাধারনত ১০-২০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আপনি যে কোন একটা ইউজ করতে পারেন; তবে অতি অতি অবশ্যই কখনো কোন পেইড থিম গুগলে ফ্রী পাইলেই ইউজ করতে যাবেন না; কারন এই থিমগুলাতে প্রচুর বাগ থাকে যার অর্থ আপনি এই থিম ইউজ করতে গেলেই আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার সম্ভবনা প্রায় ৯৯.৯৯ ভাগ। তবে ফ্রী থিম যদি ইউজ করেন সেই ক্ষেত্রে http://wordpress.org/themes/ ওয়েবসাইটে যে সব ফ্রী থিম পাওয়া যায় সেইটাই ইউজ করা সবচেয়ে ভালো।
৬. ধরেন আপনি ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতেছেন, ব্রাউজ করতে করতেই হঠাৎ একটা ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর ডিজাইন আপনার মারাত্মক মনে ধরল। আপনার ইচ্ছা হইল ঠিক এইরকম একটা ডিজাইনের ওয়েবসাইট আপনি বানাবেন। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটের থিমের নাম কি, বা কোথায় পাওয়া যাবে আপনি কিছুই জানেন না, সেই ক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? সেই ক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করবে http://www.wpthemedetector.com/ এই ওয়েবসাইটটি; আপনি যেই ওয়েবসাইটের ডিজাইন পছন্দ করেছেন সেই ওয়েবসাইটের URL কপি করে wpthemedetector এর খালি ঘরে বসিয়ে দিলেই ওই ওয়েবসাইট কি ডিজাইন ইউজ করেছে, ওই থিম এর অথর কে, ওই থিম কোথায় পাওয়া যাবে সব বিস্তারিত আপনি পেয়ে যাবেন।
৭. ওয়েবসাইটের পার্মালিংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। পার্মালিংক মানে আপনি যে URL টা পান সেইটা। ধরেন আমি একটা ব্লগ লেখলাম, ব্লগের নাম ‘ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ’; এখন লেখাটা পাবলিশ করার পর আপনি যে ডিফল্ট URL পাবেন সেটা হচ্ছে – www.shikkhok.com/post-123; এই ধরনের লিঙ্ক মাঝে মাঝেই বিব্রতকর আবার দেখতেও অসুন্দর, তার চেয়ে আপনি যদি এইরকম লিঙ্ক পান www.shikkhok.com/ওয়ার্ডপ্রেস-সেটআপ তাহলে নিশ্চয়ই এটা আরও বেশি সুন্দর। তো এই সুন্দরটুক করার জন্য চেঞ্জ করে নিন আপনার ওয়েবসাইটের পার্মালিংক। ড্যাশবোর্ডে গিয়ে পার্মালিংক অপশনে গেলেই আপনাকে দেখিয়ে দেবে আপনি কি ধরনের লিঙ্ক চান, আর একবার সিলেক্ট করে দিলেই বাকি প্রত্যেকবার অটোম্যাটিকলি আপনি ওই ধরনের লিঙ্ক পেয়ে যাবেন।
৮. মাঝে মধ্যেই ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের ডিফল্ট ফীড ছাড়াও আরও অনেক ধরনের ফীড জেনারেট করে; এই ধরেন সব পোস্টের জন্য পোস্ট ফীড, কমেন্টের জন্য কমেন্ট ফীড; যেগুলার কোন কাজ নাই, কোন কিছুই করে না বরং বেহুদা ওয়েবসাইটের ফীড বাড়ায়; এই ধরনের সমস্যা সল্ভ করতে আপনার ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ড থেকে Appearance>Editor অপশনে যেয়ে থিমের ফাংশন ফিল্ডে লিখে দিন নিচের কোডটি
ব্যাস এরপর থেকে ওয়ার্ডপ্রেস আর এই বেহুদা ফীড তৈরি করবে না।
৯. মাঝে মাঝেই যখন আপনি কোন পেজ বা পোস্ট এডিট করতে যাবেন তখন দেখবেন পাশের বক্সে একটা লেখা আসে ‘Revisions 3’ এর অর্থ হচ্ছে আপনি ওই পেজের লেখাগুলো ৩ বার এডিট করেছেন। আপনি যতবার লেখা এডিট করবেন ততবার এই রিভিশন এর সংখ্যা বাড়বে আর আপনার এই সমস্ত ফাইলগুলা ওয়ার্ডপ্রেস নিজের ডাটাবেসে জমা রাখবে, এর জন্য যে প্রবলেমগুলা হয় সেটা হচ্ছে প্রচুর আননেসেসারি ফাইল থাকার কারনে লোডিং টাইম বাড়ে, এর ফলে ওয়েবসাইট স্লো হয়ে যায়, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার ওয়েবসাইটের wp-config.php ফাইলের যে কোন জায়গায় কপি করে দিন নিচের কোডটি
এরপর থেকে আপনার ওয়েবসাইট আর কোন রিভিশন তৈরিও করবে না, রিভিশন জমাও করে রাখবে না।
১০. আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমানে কমেন্ট আসতেই পারে, তার মানে এই না সব কমেন্টই আপনার ওয়েবসাইট বা লেখা সংক্রান্ত, কিছু কিছু স্প্যাম কমেন্টও আসতে পারে যা আপনাকে বিব্রত করবে, এই ধরনের অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আপনি ইউজ করতে পারেন ‘কমেন্ট মডারেশন’ প্লাগিন্স, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি ওয়েবসাইটের বা ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট পেজের কমেন্ট বক্সই বন্ধ করে দিতে পারেন।
১১. ওয়ার্ডপ্রেসের কনফিগারেশন ফাইলেই থাকে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সংক্রান্ত সমস্ত ইনফরমেশন এবং পাসওয়ার্ড। তার মানে বুঝতেই পারতেছেন এইটা কত ইম্পরট্যান্ট একটা জিনিস, এখন এই ফাইলটা যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইট পুরোপুরি হ্যাক করা তার ১ মিনিটের কাজ। সুতরাং এই ফাইল যেভাবেই হোক আপনাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই হবে। এই কাজটি করতে আপনার হোস্টিং এর .htaccess ফাইলে যেয়ে বসিয়ে দিন নিচের কোডটুকু,
এরপর কেউই আর আপনার ওয়েবসাইটের কনফিগারেশন ফাইল খুঁজে পাবার প্রশ্নই ওঠে না।
১২. কোন ওয়েবসাইট চালু করার পরই গুগল এইটা তার ইনফরমেশন ডাটাবেসে নিয়ে ন্যায় এবং দুনিয়ার সবার কাছে সেইটা শো করতে থাকে, এখন আপনি যদি একটা ওয়েবসাইট মাত্রই খোলেন আর তাতে কিছুই যোগ না করেন তখন ইনফরমেশন দেখানোর জন্য গুগল সেই ওয়েবসাইটে কিছুই খুঁজে পায় না বরং কোন ইনফরমেশনই খুঁজে না পাওয়ার কারনে আপনার ওয়েবসাইটের ইম্প্রেশন খারাপ হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সেটআপ দেওয়ার পরপরই আপনার ইনডেক্স অফ করে রাখবেন; এর ফলে গুগল আর আপনার ওয়েবসাইটের ইনফরমেশন নিজের ডাটাবেসে অ্যাড করবে না; তবে পুরো সাইট তৈরি করার পর অবশ্যই আপনার ইনডেক্স আবার অন করে দেবেন।
তো ওয়ার্ডপ্রেসের বেসিক কোর্স এইটুকুই। আজ এই পর্ব দিয়েই শেষ হয়ে যাবে আমাদের ‘ওয়ার্ডপ্রেস পরিচিতি’ কোর্স; সেটআপ বা আরও অন্যান্য জিনিসের জন্য দেখে নিতে পারেন আগের পর্বগুলো। যে কোন সমস্যায় আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই ওয়েবসাইটে অথবা লিখতে পারেন নিচের কমেন্ট বক্সে। সবাই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।
শেষকথা – যদিও CMS এর জন্য বা ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য কোন ধরনের কোডিং জ্ঞান লাগে না বলা হয়, তবুও আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশী চমৎকার ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তবে এই কোডিং জ্ঞান গুলো থাকা বাধ্যতামূলক। আর যারা ফ্রীল্যান্সিং এ আগ্রহী তারা সামান্য ওয়ার্ডপ্রেস জ্ঞান দিয়ে কিছু টাকা আয় করতে পারলেও ভালো কিছু করার জন্য আরও অনেক কিছুই শিখতে হবে। আর শেখার জন্য সবচেয়ে ভালো ইন্সটিটিউশন একটাই – গুগল।
 
No comments:
Post a Comment